নিজস্ব প্রতিবেদক।
ভূমিদস্যু জুয়েল ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীর অভিযোগ; থানায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগ, আদালতের নির্দেশে তদন্ত শুরু
সোনারগাঁও নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় গাউছিয়া-মদনপুর এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের পাশে, চেংগাইন মৌজায় এক ব্যবসায়ীর প্রায় ৩০ কোটি টাকার জমি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়ভাবে ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত মাহবুব রশিদ জুয়েল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী আবদুল হামিদ।
অভিযোগে জানা যায়, সোনারগাঁয়ের নলাটি এলাকার উল্লিখিত জমিতে দীর্ঘদিন ধরে মালিকানার অধিকার থাকা সত্ত্বেও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মাহবুব রশিদ জুয়েল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী বালু ফেলে জমি ভরাটের মাধ্যমে জোরপূর্বক দখল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, দখলের সময় মালিক পক্ষের কোটি টাকার মালামাল ভাঙচুর ও লুটপাটের পাশাপাশি ২০ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগও উঠেছে।
ভুক্তভোগী আবদুল হামিদ বলেন, “আমি সোনারগাঁ থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। বাধ্য হয়ে আমি আদালতের শরণাপন্ন হই।” আদালতে দাখিল করা মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন (মামলা নং: ২২৯/২৪)। মামলায় জমি দখলের পাশাপাশি জুয়েল বাহিনীর বিরুদ্ধে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি এবং ২০ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আদালতের নির্দেশে সোনারগাঁ থানা পুলিশকে তদন্তে নিয়োজিত করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সেলিম সরেজমিন তদন্তে গেলে, তার উপস্থিতিতেই দখলদারদের দ্বারা হেনস্তার শিকার হন অভিযোগকারী আবদুল হামিদ। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—আইনের চোখের সামনেই যদি ভুক্তভোগী নিরাপদ না থাকেন, তাহলে প্রভাবশালী দখলদারদের এই দুঃসাহসের উৎস কোথায়?
স্থানীয়দের ভাষ্য, মাহবুব রশিদ জুয়েল দীর্ঘদিন ধরেই প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন জনের জমি দখলের সঙ্গে জড়িত। এর আগেও তার বিরুদ্ধে হাসান কেমিক্যাল, লিপি পেপার মিলসহ একাধিক ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “জুয়েল বাহিনী যে কোনো বিরোধিতার মুখে হামলা ও হুমকির আশ্রয় নেয়। আমরা নিজের এলাকাতেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
জমি দখল, চাঁদাবাজি ও সহিংসতার মতো স্পর্শকাতর ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা এবং আদালতের নির্দেশের পরও হেনস্তার অভিযোগ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
এ বিষয়ে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজুর রহমান বলেন, আমরা আদালতের নির্দেশে তদন্ত শুরু করেছি। জমির প্রকৃত মালিকানা, দখল সংক্রান্ত অভিযোগ এবং ঘটনাস্থলে সংঘটিত ঘটনার যথাযথ তদন্ত চলছে। কোনো পক্ষ যদি হেনস্তার শিকার হয়ে থাকে, সেটিও তদন্তের আওতায় আনা হবে। আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অভিযুক্ত মাহবুব রশিদ জুয়েলের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
তদন্ত চলমান থাকলেও এখন প্রশ্ন উঠছে-প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা দখলবাজ চক্র ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।